Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বালাইনাশক ব্যবহারের গুরুত্ব এবং ব্যবহারের সচেতনতা

বালাইনাশক ব্যবহারের গুরুত্ব এবং ব্যবহারের সচেতনতা
ড. মোঃ আলতাফ হোসেন
বালাইনাশক বলতে আমরা সাধারণভাবে ওইসব বস্তুকে বুঝে থাকি যা দ্বারা কৃষিজাত দ্রব্য যেমন- ফসল, মাছ এবং গৃহপালিত পশু-পাখি ইত্যাদির উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের সময়ে ক্ষতিকর রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ এবং আগাছার উপদ্রব থেকে কৃষি পণ্যগুলোকে সুরক্ষা করে থাকে। বালাইনাশক যে সকল জীব বা জীবাণুর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয় তাদের নাম অনুসারে সার্বিকভাবে এদের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়, যেমন- আগাছানাশক (আগাছা দমনের জন্য), কীটনাশক (কীটপতঙ্গ দমনের জন্য), ইঁদুরনাশক (ইঁদুরজাতীয় প্রাণী দমনের জন্য), ছত্রাকনাশক (ছত্রাকজনিত রোগ দমনের জন্য), ব্যাকটেরিয়ানাশক (ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ দমনের জন্য) ইত্যাদি। আবার রাসায়নিক গঠনের উপর ভিত্তি করে বালাইনাশককে- জৈব, অজৈব, কৃত্রিম, জৈবিক ইত্যাদি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। জৈবিক বালাইনাশককে আবার অনুজৈবিক, জৈব রাসায়নিক এবং উদ্ভিজ্জ এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
বালাইনাশক ব্যবহারের গুরুত্ব
কৃষি ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে যদি বালাইসমূহের বিরুদ্ধে কোনো রকম প্রতিরোধ এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে ৭০% পর্যন্ত ফলন নষ্ট হতে পারে। আগাছার কারণে গড়ে ৩০-৩৫%, পোকামাকড়ের কারণে ২০-২৫% এবং রোগবালাইয়ের কারণে গড়ে ১৫-২০% পর্যন্ত ফলন নষ্ট হতে পারে। সুতরাং, এখান থেকে বোঝা যায় বালাইকে দমন করে ফসলকে সুরক্ষা করার জন্য বালাইনাশকের গুরুত্ব কতটা অপরিহার্য।
বালাইনাশক ব্যবহারের প্রধান সুবিধা হচ্ছে ফসলের আগাছা, রোগ ও পোকামাকড় দমনের মাধ্যমে ফসলের ফলন ও গুণগতমান বৃদ্ধি পায়। মানুষ গাছপালা, মাছ ও প্রাণিসম্পদের রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন জীবাণুর বাহককে (যেমন- মশা, জাবপোকা, সাদামাছি, থ্রিপস ও অন্যান্য) দমন করে রোগের হাত থেকে কৃষিপণ্য ও জীবনকে সুরক্ষা করা যায়। এসব ব্যবস্থাপনার ফলে- কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, গুণাবলী উন্নত হয় এবং ক্ষতিকর সৃষ্টিকারী বিভিন্ন বালাই দমন হয়।
আমেরিকায় এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বালাইনাশকের জন্য একগুণ টাকা খরচ করলে, বিনিময়ে চার গুণ টাকার উৎপাদন ফেরত পাওয়া যায় এবং বালাইনাশক ব্যবহার না করলে ফসলের গড়ে ১০% ফলন কমে যায়। যদি বালাইনাশকের ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে ফসলের উৎপাদন ও গুণগতমান কমে যাবে, ফলশ্রুতিতে দাম বেড়ে যাবে এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বহু মানুষের চাকরি হারাবে, পৃথিবীতে ক্ষুধার্থ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে, এমনকি দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে। সুতরাং, বালাইনাশক ব্যবহার এবং কৃষিপণ্য উৎপাদন একে অপরের সাথে জড়িত। অর্থাৎ কাক্সিক্ষত কৃষি উৎপাদনের জন্য বালাইনাশক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যথেচ্ছ বালাইনাশক ব্যবহারের চ্যালেঞ্জসমূহ
সাধারণত বালাইনাশক হচ্ছে রাসায়নিক পদার্থ-যার উপাদান হচ্ছে অক্সিজেন, ক্লোরিন, সালফার, ফসফরাস, নাইট্রোজেন, ব্রোমিন এবং সেই সাথে ভারী ধাতু যেমন- আর্সেনিক, কপার, সালফেট, সীসা, পারদ ইত্যাদি। বালাইনাশক মাত্রই বিষাক্ত, এরা বালাইকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত করে মেরে ফেলে এবং বিভিন্নভাবেই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। যখনই বালাইনাশক কৃষি জমি, বাগান অথবা যেখানেই প্রয়োগ করা হউক না কেন সেটা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সংস্পর্শে আসে।     প্রয়োগকৃত বালাইনাশক যেমন- কীটনাশকের শতকরা ৯৮ ভাগ এবং আগাছানাশকের শতকরা ৯৫ ভাগই বাতাসে, পানিতে এবং মাটিতে মিশে যায়।
বালাইনাশক কৃষি জমিতে ব্যবহারের ফলে দীর্ঘসময় পরিবেশে থাকে এবং সেগুলোর মাইক্রো ফোঁটাগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং বাতাসের গুণগতমানের অবনতি ঘটিয়ে বাতাসকে দূষিত করে এবং ওই এলাকার জনসাধারণের শ্বাসের মাধ্যমে গিয়ে মানুষকে অসুস্থ করে। বড় ফোঁটাগুলো প্রয়োগকৃত ফসলে এবং মাটিতে পড়ে। এখন ফসলে পড়ে থাকা বালাইনাশক ফসলের ক্ষতিকর ও উপকারী উভয় ধরনের জীবকেই ধ্বংস করে এবং ফসল কর্তৃকও শোষিত হয়। শোষিত বালাইনাশক ফসলের দানায় ও ফলের মধ্যে অবশেষ হিসেবে থেকে যায়, ফলশ্রুতিতে মৌমাছিসহ অন্যান্য পরাগায়নকারী কীটপতঙ্গ যারা ফুল ও ফল থেকে মধু নেয় ও পরাগায়ন ঘটায় তারাও মারা যেতে পারে।
মাটিতে পড়ে থাকা বালাইনাশক মাটিকে দূষিত করে এবং মাটিতে বসবাসকারী নন-টারগেট জীব যেমন- উপকারী ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, কেঁচো ইত্যাদিকে মেরে ফেলে। এসব উপকারী জীব মাটির জৈব পদার্থকে ভাঙতে সহায়তা করে এবং পানি ও পুষ্টি শোষণ করে সেগুলোকে উদ্ভিদের গ্রহণ উপযোগী করে, যা উদ্ভিদ শোষণ করে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। যথেচ্ছা বালাইনাশক ব্যবহার করার কারণে অনিচ্ছাকৃত পরিণতি হিসেবে মাটির ওইসব উপকারী অনুজীব ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং পুষ্টি সরবরাহ বিঘিœত হয়ে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। আবার, বালাইনাশক যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে উদ্ভিদ কর্তৃক কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণও কমে যেতে পারে। ফলশ্রুতিতে উদ্ভিদ মারাও যেতে পারে। এছাড়াও ফসলে ও মাটিতে পড়ে থাকা বালাইনাশক পানি ও বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে জলাশয়ে গিয়ে জলজ উদ্ভিদ, মাছ ও জলজ প্রাণীকে ধ্বংস করে। অর্থাৎ বালাইনাশক ব্যবহারে সামগ্রীক পরিবেশই দূষিত হয় এবং আমরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ক্ষতিগ্রস্ত হই।
বালাইনাশক ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্যের উপর স্বল্পমেয়াদি ক্ষতির প্রভাব পড়ে, আবার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির প্রভাবও পড়ে- যা ঘটতে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর লাগে। স্বল্পমেয়াদি প্রভাবের মধ্যে রয়েছে- চোখ জ্বালাপোড়া করা, চামড়ায় জ্বালাপোড়া, ফুসকুড়ি ও ফোসকা পড়া ইত্যাদি। আবার, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়ায় বালাইনাশকের অবশেষ দীর্ঘসময়ে শরীরে জমা হয়ে জৈববিবর্ধনের কারণে দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি হ্রাস, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, বন্ধ্যাত্ব, জন্মগত ত্রুটি, ভ্রƒণের মৃত্যু, টিউমার, রক্ত ও ¯œায়ুবিক রোগ, ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার নষ্ট হওয়া, অন্তঃস্রাবী গ্রন্থির ঐক্যনাশ ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হয়- যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। বালাইনাশক ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন গ্রিনহাউজ গ্যাসের উৎপাদনও বেড়ে যায়, যা জলবায়ু পরিবর্তনসহ পৃথিবীর উষ্ণায়নকে ত্বরান্বিত করে।
বালাইনাশকের পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে করণীয়
বালাইনাশক একদিকে যেমন আমাদের খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণকে বালাইয়ের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত করছে আবার অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিও সৃষ্টি করছে। এমতাবস্থায়, বালাইনাশক ব্যবহার করে ফসল সুরক্ষার উদ্দেশ্য এমন হতে হবে যেন বালাইয়ের আক্রমণের কারণে ফসল বিনষ্টের মাত্রা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে থাকে এবং পরিবেশের প্রতি ক্ষতিকর প্রভাবও সর্বনিম্ন হয়। সুতারাং বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব বা দূষণ প্রতিরোধে যেসব পদক্ষেপগুলো নিতে হবে সেগুলো হলো-
বালাইনাশক ব্যবহারের সময় উপযুক্তভাবে ‘ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ’ ব্যবহার করতে হবে। কোনো ফসলে বা এলাকায় ঘনঘন স্প্রে না করে পুনরায় স্প্রে করার জন্য নির্ধারিত নির্দিষ্ট সময় দিতে হবে। কৃষি শ্রমিকসহ যারা বালাইনাশক নিয়ে কাজ করেন তাদেরকে বালাইনাশকের ব্যবহার ও সংরক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে যেন তারা সঠিক নিয়ম মেনে বালাইনাশক ব্যবহার করতে পারেন। রাসায়নিক বালাইনাশকের বিকল্প হিসেবে যেসকল সহজলভ্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি রয়েছে, সেগুলোর ব্যবহারকে প্রাধান্য দিতে হবে। যেমন- চাষপদ্ধতিগত পরিচর্যা বা কৌশল, জৈব বালাই ব্যবস্থাপনা (যেমন- বালাইয়ের  প্রাকৃতিক শত্রু, ফেরোমন ফাঁদ এবং অনুজীবীয় বালাইনাশক ইত্যাদি), বালাই প্রতিরোধী জাত এবং ট্রান্সজেনিক ফসল প্রভৃতি।
চাষপদ্ধতিগত পরিচর্যার মধ্যে রয়েছে একাধিক ফসলের চাষ, ফসল পরিবর্তন, পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণের ব্যাপকতার সময় বুঝে বপন বা রোপণ সময়ের পরিবর্তন, ফাঁদ ফসলের চাষ ইত্যাদি। জৈব বালাই ব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে উপকারী জীবসমূহ ফসল ক্ষেতে অবমুক্ত করা। যেমন- ক্ষতিকর পোকামাকড়ের বিভিন্ন ধরনের প্রিডেটর ও প্যারাসিটয়েড ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিমভাবে বংশবৃদ্ধি করে মাঠে অবমুক্তকরণ। জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা যেমন- পোকামাকড়ের দেহে রোগ সৃষ্টিকারী ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি; ভেষজ বালাইনাশক ব্যবহার করা। যেমন- কেনোলা তেল, নিমতেল, নিমবীজ নির্যাস ইত্যাদি। কৌলিতাত্ত্বিকভাবে পরিবর্তিত বালাই প্রতি প্রতিরোধী ফসলের জাত চাষ করা। যেমন- বিটি ফসল ও অন্যান্য জিএমও ফসল ইত্যাদি। নির্দিষ্ট প্রজাতির শত্রুপোকা দমনের জন্য তাদের পুরুষদেরকে বন্ধ্যাকরণ করে সেগুলো মাঠে অবমুক্ত করে ওই পোকার প্রজননকে নিয়ন্ত্রণ করা, যদিও প্রযুক্তিটি ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ।
বিগত দুই দশকে জৈব বালাইনাশকের উন্নয়নে দর্শনীয় অগ্রগতি হয়েছে এবং মাঠে প্রয়োগ কৌশলও পরিশ্রুত হয়েছে। সারা পৃথিবীতে ট্রান্সজেনিক ফসল শতাধিকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রান্সজেনিক ফসল উদ্ভাবনের মধ্যদিয়ে উন্নত উন্নয়নশীল দেশে বালাইনাশকের ব্যবহারও যথেষ্ট পরিমাণে কমে এসেছে। সুতরাং, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা কর্মসূচিতে জৈব বালাইনাশকভিত্তিক কৌশলকে কার্যকরী করে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগানো গেলে বালাইয়ের আক্রমণের দ্বারা ফসল বিনষ্টের পরিমাণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে আসবে এবং টেকসই                  এগ্রো-ইকোসিস্টেম সুনিশ্চিত হবে।

লেখক : মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কীটতত্ত্ব বিভাগ, ডাল গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঈশ্বরদী, পাবনা। মোবাইল : ০১৭২৫-০৩৪৫৯৫, ই-মেইল : hossain.draltaf@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon